শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউল হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও অপসারনের দাবিতে রাজপথে বিল্পবী ছাত্র জনতা ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়াল ৪৪ হাজার সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়াকে দেখে কেঁদে ফেললেন মির্জা ফখরুল সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ওসমানী জাতীয় স্মৃতি পরিষদ-এর বিশেষ বাণী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা খ. ম. আমীর আলী ছাত্র বৈষম্য আন্দোলনে আহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা নিয়ে পাশে বিএনপি নেতা মোঃ সাইফুল ইসলাম নরসিংদীর মনোহরদীতে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানক্লাব ‘নেবুলাস’-এর যাত্রা শুরু প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের নিঃস্ব করে কোটি টাকা প্রতারণা করে লাপাত্তা কৃষক লীগ নেতা হান্নান শেখ! টাকার বিনিময়ে বিদ্যুতের তার খাম্বা মিটার এনে দেন ইলেকট্রিশিয়ান জুলিয়ান!
পরিবার থেকে টাকা না দিলে দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে মেয়েরা

পরিবার থেকে টাকা না দিলে দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে মেয়েরা

স্লিম হওয়ার জন্য শত শত তরুণী ও কিশোরী ইয়াবা আসক্ত হচ্ছে। এদের বেশির ভাগই রাজধানীর উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ইয়াবায় আসক্ত শতকরা ৮০ ভাগ ছাত্রীর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে।

মাদকাসক্ত হয়ে অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ায় স্কুল-কলেজের গণ্ডি পার হতে পারছে না অনেক তরুণী। আবার মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণির ছাত্রীও ইয়াবার নেশায় উন্মাদ।

চিকিৎসা করেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে না মাদকাসক্তরা। ফলে তারা যৌন অপরাধসহ নানা ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ইয়াবার ভয়াবহ ছোবল থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন আক্রান্ত মেয়ের বাবা-মায়েরা। ইয়াবা সেবন করার কারণে ধ্বংসের পথে হাজার হাজার পরিবার।

মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসকরা বলছেন, সাম্প্রতিকালে রাজধানীর মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে প্রতিদিন এসকল তরুণী চিকিৎসা নিতে আসছে। আক্রান্ত কিশোরী-তরুণীদের ৮০ ভাগই বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। কেউ আসক্ত হচ্ছে পাড়ার বান্ধবীর পাল্লায় পড়ে, আবার কেউ বা আসক্ত হচ্ছে স্কুল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীর পাল্লায় পড়ে। ইয়াবা সেবন করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে বান্ধবী ও সহপাঠীরা।

এভাবেই মরণ ব্যাধি নেশায় আসক্ত হচ্ছে তরুণীরা। এক পর্যায়ে তরুণীরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে ইয়াবা খাওয়া ও বেচাকেনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পরিবার থেকে ইয়াবা কেনার টাকা না দিলে বাবা-মাকে মারধর করে মাদকাসক্ত মেয়েরা। অনেক সময় মেয়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে পরিবার ছাড়া করছেন বাবা-মা। আবার পরিবার থেকে টাকা না দিলে দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে এসব মেয়ে।

ইয়াবা কেনার টাকার জন্যই অপরাধে জড়াচ্ছে মাদকাসক্ত মেয়েরা। এই প্রতিনিধির সঙ্গে নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা ১০ তরুণী ইয়াবা আসক্ত হতে শুরু করে তাদের জীবনের সর্বনাশা মর্মস্পর্শী ঘটনাগুলি বর্ণনা করেন। তারা বলেন, আমরা এখন জীবিত থেকেও মৃত।

মাদকাসক্ত মেয়েদের অভিভাবকরা বলছেন, চিকিৎসা করেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারছেন না তাদের মাদকাসক্ত সন্তানদের। ইয়াবা সেবন করে অনেক পরিবার এখন ধ্বংস হতে চলছে। সমাজেও হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে মেয়েদের অপকর্মের কারণে। তারা বলছেন, আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের মেয়েদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাই। ইয়াবা আসক্ত এই তরুণীদের পুরো পরিবার নি:শেষ হয়ে গেছে। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আসক্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা বলছেন, রাজধানীতে ইয়াবার ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। উঠতি বয়সী তরুণীরাই সবচেয়ে বেশি আসক্ত হচ্ছে মরণ ব্যাধি এই নেশায়। ইয়াবার কালো থাবা এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তরুণ প্রজন্ম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।

ইয়াবায় আসক্ত ১০ তরুণী বলেছেন, ইয়াবা সেবন করে আমরা ধ্বংস হয়ে গেছি। ক্ষুধা মান্দা, ক্লান্তি দূর, নিদ্রা না আসা ও স্লিম করার কথা বলে ইয়াবা সেবনে উত্সাহিত করে বান্ধবীরা। বান্ধবীদের পাল্লায় পড়ে ইয়াবা খেয়েছি। কিন্তু এখন হিতে বিপরীত হয়েছে। পরিবার চিকিৎসা করেও স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারছে না। আমাদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদেরকে কেউ বিয়েও করবে না। আমাদের আকুতি একটাই, আমরা এখন বেঁচে থাকতে চাই।

মাদক নিয়ে কাজ করা চিকিৎসকরা বলছেন, ইয়াবায় আসক্ত মেয়েরা পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়ে মাদক কেনার জন্য দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। কেউ আবাসিক হোটেলে পুরুষের মনোরঞ্জণ করে উপার্জিত টাকা দিয়ে ইয়াবা কেনে। আবার ৮-১০ জন আসক্ত তরুণী মিলে কেউ কেউ বাসা ভাড়া নিয়ে যৌন ব্যবসা করছে। ইয়াবা কেনার জন্যই মূলত তারা এসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এসব অপরাধের কারণে তারা পরিবার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

মাদক নিরাময় কেন্দ্রে এই প্রতিনিধির কাছে কথা হয় প্রিয়াংকা (ছদ্মনাম) নামের এক মেয়ের। সে জানায়, বান্ধবীদের পাল্লায় পড়ে জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে সে। মেয়েটি বলে, প্রথমে ভাবতেই পারিনি, এই পথ এত ভয়াবহ। আমার কারণে পুরো পরিবারও ধ্বংস। আমার বাবা-মা স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে অনেক চিকিৎসা করাচ্ছেন, এরপরেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছি না।

ইয়াবার টাকা না দেওয়ায় বাবা ও মাকে মারধরও করেছি। দশম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় এক বান্ধবীর মাধ্যমে একদিন ইয়াবা খাই। এর পর থেকে একদিন ইয়াবা না খেলে পাগল হয়ে যেতাম। আমার সর্বনাশ করেছে ওই বান্ধবী। আমি এখন শুধু বেঁচে থাকতে চাই।

সিনথিয়া (ছদ্মনাম) নামের ইয়াবা সেবনকারী এক কলেজ ছাত্রী জানায়, এক বান্ধবীর বয় ফ্রেন্ডের মাধ্যমে তারা প্রথমে ইয়াবা সেবন করে। এক পর্যায়ে নিয়মিত ইয়াবা সেবন করে সব বন্ধু-বান্ধব মিলে যৌনকর্মসহ নিয়মিত আড্ডা দিতাম। এভাবেই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাই। ইয়াবা সেবন করার ফলে ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতা থাকে না।

অস্বাভাবিক আচরণ করার ফলে পরিবার থেকেও এক সময় তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে বাধ্য হয়ে যৌন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ি। সে জানায়, পতিতা নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থার কর্মকর্তারা তাকে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে এসে চিকিৎসা দিচ্ছেন। মেয়েটি এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়।

এই দুই মেয়ের মতো হাজা হাজার মেয়েও একই ধরণের কথা বলছেন। তারা বলছেন, ইয়াবা হাতের নাগালে পাওয়ার কারণেই অন্ধকার পথে পা বাড়াচ্ছেন তরুণীরা। তারা ইয়াবা পাচার ও ব্যবসার সঙে জড়িতদের ক্রসফায়ার করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

ইয়াবা সেবনকারী মেয়ের এক অভিভাবক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েটাকে বাঁচাতে চাই। ইয়াবার কালো থাবায় আমার মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। যন্ত্রণাময় এ জীবনের অবসান চাই। জীবন এভাবে চলতে পারে না।

ইয়াবার কালো থাবা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আমার পরিবারের মত সারা দেশের লক্ষ পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুতি জানিয়ে এই অভিভাবক বলেন, প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী। এই দেশের নারীদের সুরক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিন। না হলে আমার মেয়ের মত লাখ লাখ মেয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com